উত্তরদিনাজপুর

এ এক অন্য ভালোবাসা, হৃদয়ের বন্ধনে আবদ্ধ নুটু ও ভানু

এ যেন এক অন্য ভালোবাসার গল্প। ভালোবাসা যা ভাষায় বোঝানো যায় না। ভালোবাসা যা বাধা মানে না। একে অপরকে চোখে হাড়ায় ওরা। ওরা মানে নুটু আর ভানু। ওদের ভালোবাসার খবর এখন উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জের বিন্দোল এলাকার উত্তর মৌজগায়ের মানুষের কাছে এক মুখোরোচক আলোচনার বিষয় বস্তু হয়ে উঠেছে।

           ভানুর আজ মন ভালো নেই, স্কুল থেকে ফিরেই নুটুর খোঁজ করেই চলেছে। কখোনো নুটুকে খুজছে বাড়ির ছাদে উঠে, তো কখোনো আবার বাড়ির আমগাছের পাশে। নুটুর দেখা কোথাও না পেয়ে স্কুল থেকে ফিরেই সাইকেল নিয়ে ভানু বেড়িয়ে পরছে পাড়ার এদিকে ওদিকে। কিন্তু নুটুর দেখা নেই। আসলে প্রতি দিনের মতো আজও নুটু ভানুর বাড়িতে এসেছিল সেই ভোর বেলায়। কিন্তু ভানুর বাড়ির সবাই ব্যস্ত থাকায় নুটুকে সময় দিতে পারেনি কেউ। আর ভানুকেও স্কুলে যেতে হবে। ব্যস্ততায় নুটুর খোঁজ না নিয়েই স্কুল চলে যায় ভানু। ব্যস স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে নুটুর খোজ পাওয়া যাচ্ছে না। তবে মন খারাপ নিয়ে ভানু বাড়ি ফিরতেই নুটুর দেখা মিললো। বাড়ির আমগাছের ডালে বসে আছে নুটু। নুটু মানে এক টিয়াপাখি। বছর খানেক ধরে ভানুদের বাড়িতে দেখা যায় এই টিয়াপাখিকে। বাড়িতে এসে সকলের সাথে ধীরে ধীরে ভাব জমায় নুটু। পরিবারের গৃহিণী ভারতী রায় বর্মনের খুব কাছের হয়ে ওঠে নুটু। তখন নুটুকে সবাই টিয়া বলেই ডাকতো। আর টিয়া তখন ভারতী ছাড়া আর কাউকেও পছন্দ করতো না। এরপর ওই টিয়া ফের কোথায় চলে যায় প্রায় দিন ১৫ আর খোঁজ মেলেনি তার। তবে টিয়া দিন ১৫ পর ফের ফিরে আসে আর এবার ভারতীর ছোটো ছেলে ভানু কিশোরের খুব কাছের হয়ে ওঠে। ভানুকে দেখলেই সে নুটু নুটু বলে ডাকতো। আর সেই থেকেই ওই টিয়ার নাম হয়ে যায় নুটু। প্রতিদিন ভোর ৫ টায় ভানুদের বাড়িতে হাজির হয় সে। সোজা চলে যায় ভানুর বিছানার পাশে আর ডাকতে থাকে নুটু নুটু বলে। ভানু উঠলেই খেলা শুরু। সেই ভানু স্কুলে যাওয়া অবধি। দুপুরে ভানু বাড়ি ফিরলে ভানুর সাইকেলে চেপে একটু চক্কর দেওয়া। আর সব ফেলে ভানু পড়তে বসলেই তার বইয়ের মাঝে দাঁড়িয়ে তাকে ডিস্টার্ব করা। এগুলো নুটুর নৈমন্তিক কাজ। বিকেল হলেই ফের কোথাও উড়ে চলে যায় সেই টিয়া। ফের ভোরবেলায় হাজির ভানুর বিছানায়। ভানুর হাতেই খাওয়া দাওয়া আর ভানু স্কুলে গেলেই কোথাও চলে যাওয়া। ভানু ফিরলে ফের হাজির নুটু। আসলে এ এক অনবদ্য ভালোবাসার কাহিনী। ভানুর বাবা নারায়ন বর্মন অবাক হয়ে যান এই সম্পর্ক দেখে। নারায়নের কাছেও মাঝে মাজে আসে নুটু। কিন্তু নুটুর যত হিংসে ভানুর দিদি নিকিতার উপরে। সবার কাছে গেলেও নিকিতার কাছে যায় না নুটু। 

          এদিকে নুটুর প্রিয় বন্ধু ভানু জানায়, প্রতিদিন সকালে আসে, তার সাথে খেলা করে, যেদিন সে আসেনা সেদিন খুব খারাপ লাগে। 

          এবিষয়ে ভানুর মায়ের এখন একটাই দুশ্চিন্তা, যদি কোন দিন নুটু সকালে না আসে তবে ভানুকে কিভাবে সামলাবে। ওই এখন আমাদের পরিবারের একজন হয়ে উঠেছে।

          এবিষয়ে ভানুর বাবা নারায়ন বর্মণ জানান, আজকে নুটুর সঙ্গে আমারা ঠিক মতো কথা বলেনি, যার কারনে এদিন নুটু তাদের উপর অভিমান করে আছে। আসলে এদিন সকালে ভালোবাসার বিনিময়ে খামতি ছিল। তাই এত অভিনান।

বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন নিচের লিংকে

https://www.youtube.com/embed/9kU18XUfUZk